ঢাবি প্রতিনিধি দৈনিক নবযাত্রাঃকরোনার এই মহামারীর মাঝেই ফেনীতে নিজ বাড়িতে ভাই-ভাবীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ঢাবি শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম উপমা। পাশবিকতার হাত থেকে রক্ষা পাননি তার মা-বাবাও। এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও মিলেছে ভাইদের থেকে। এ অবস্থায় বাবা-মাসহ আতংকে দিন কাটাচ্ছেন উপমা।ভুক্তভোগী উপমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের একজন আবাসিক ছাত্রী।উপামার সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, গত কয়েকদিন যাবত নিয়মিত নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তিনি। তার বড় দুই ভাই মিলে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস ও ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে উপমা ও তার মা-বাবাকে। নির্যাতনের কোন তথ্য যাতে কেউ পেতে না পারে এজন্য কেড়ে নেওয়া হয় তার মোবাইল ফোনও। মুছে ফেলা হয় তার ফোনে থাকা সবকিছু,ভেঙে ফেলা হয় তার মেমোরিকার্ড।এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮ ভাইবোনের সংসার উপমাদের। ভাইবোনদের মধ্যে উপমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার অন্য ভাইবোনরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। তাকে নিয়ে খুব গর্ব ও আশা তার মা-বাবার। আর ঠিক এই কারণেই ভাইবোনদের হিংসার চোখে পড়েন তিনি। বাবা-মায়ের আদরের হওয়ায় তারা সম্পত্তি লিখে দিবেন উপমাকে! এ আশংকা থেকেই সম্প্রতি তার ক্যারিয়ার ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তার নিজ সহোদররাই!! তাকে হত্যার হুমকিও দিতে থাকে নিয়মিত।এ ব্যাপারে পুলিশের সহায়তা চেয়ে উল্টো হেনস্তার শিকার হোন উপমা। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ তাদের বাড়িতে আসলে ভাইয়েরা মিলে তার বিরুদ্ধেই মাদকাসক্তির অভিযোগ করেন। মানসিকভাবে অসুস্থ আখ্যা দেয় উপমাকে। শুধু তাই নয়, তাকে মাদকাসক্ত প্রমাণ করতে স্থানীয় ‘ফেনী সাইকিয়াট্রি হাসপাতাল’এ জোড় করে ভর্তি করায় তার বড়ভাই। শুধু ভর্তি করেই ক্ষান্ত হয়নি এই ঘাতক। চালাতে থাকে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন,নিয়মিত দিতে থাকে ইনজেকশন। প্রেসক্রিপশনের বাইরে খাওয়ানো হয় ঔষধ!পরবর্তীতে তার মা-বাবা ও মামা গিয়ে ছাড়িয়ে আনেন উপমাকে। বাড়িতে আসার পর ভাইয়েরা মিলে অপমান করে তার বাবা-মাকে। নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া শুরু করে তারা। এক চাচার মাধ্যমে হুমকিও দেওয়া হয় উপমাকে। এমনকি নিজ বোনকে ধর্ষণ করানোর হুমকি দিতেও দ্বিধা করেনি পাষণ্ডরা.! উপমার আরেক বোনও একসময় এই হুমকি পেয়েছিলেন। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করতে গিয়েও ব্যর্থ হন তিনি।এদিকে মেধাবী মেয়ের উপর এমন নির্যাতনের খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তার বাবা-মা। এমনকি নিজ ছেলেদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হন তারা। সম্প্রতি দ্বিতীয়বার স্ট্রোক করেন উপমার বাবা। তার মায়ের ডায়াবেটিস ২৬!! এ অবস্থায় চরম আস্থাহীনতায় ভুগছেন তারা। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য হাসপাতালে নির্যাতনের সিসিটিভি ফুটেজ চান উপমা। কিন্তু, তার ভাইয়ের প্রভাবে তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, উপমাকে মানসিক ভারসাম্যহীন করে তুলতে চায় তার ভাইয়েরা। এমনকি ভুল ঔষধ প্রয়োগে মেরে ফেলার চেষ্টাও করে তারা। আর, এ সংক্রান্ত কোন প্রমাণ রাখতে চায় না তারা। এজন্যই সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন উপমা। উপমার এক চাচাতো ভাই স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তার ভয়ে কিছু বলতে পারছে না এলাকার কেউ। প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও কোনো সাড়া পাননি উপমা। তার চাচা স্থানীয় সংসদ সদস্য হওয়ায় উনার নাম ভাঙিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে তার ভাইয়েরা। যদিও ওই সংসদ সদস্য জানান তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এ অবস্থায় মা-বাবার জীবন এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত উপমা।কতিপয় প্রভাবশালী,স্বার্থান্বেষীর জন্য অঙ্কুরেই কি বিনষ্ট হয়ে যাবে একটি সম্ভাবনাময় জীবন.? দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের মেধাবী শিক্ষার্থীর এ অবস্থায় প্রশাসন কেন চুপ! প্রশাসনের কি কিচ্ছু করার নেই.!! এ নির্মমতার দায় নিবে কে.? উপমার মতো মেধাবীকে এভাবে হারিয়ে যেতে দিব আমরা.?? জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রইলো।